বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:০৪ পূর্বাহ্ন
ডাকাতির ৬ দিনের ব্যবধানে মালামাল সহ ৩ ডাকাত গ্রেপ্তার করল পুলিশ
সত্যেন্দ্রনাথ রায়,নীলফামারী, প্রতিনিধি
নীলফামারীর ডোমারে এক পুরোহিতের বাড়িতে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতির ঘটনায় ৬ দিনের ব্যবধানে মালামাল সহ তিন ডাকাতে কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির ১০ হাজার টাকা, মোবাইল, একটি কাসার প্লেট, দুইটি কাসার বাটি ও একটি কাসার গ্লাস উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, শ্রী অনিল চন্দ্র দাস(২৯), রঙ্গিয়া দাস(৫০) ও নজু মামুদ ওরফে নজরুল(২৭)। তাদের সবার বাড়ি নীলফামারী জেলায় ও অধিকাংশই জেলে সম্প্রদায়ের বিপদগামী সদস্য।
মঙ্গলবার (৯মে) দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ৩০ এপ্রিল গভীর রাতে ৮ থেকে ১০ জনের একটি ডাকাতদল মুখে কালো রং মেখে মাস্ক পড়ে ডোমারের ছোট রাউতা ব্রাহ্মণ পাড়ার পুরোহিত শ্রী বিজয় চক্রবর্তীর বাড়ির ঘরের দরজা ও সিটকিনি ভেঙ্গে প্রবেশ করে। এরপরর বাড়ির লোকজনদের ছোড়া দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের জিম্মি করে নগদ এক লক্ষ আটাশি হাজার টাকাসহ ২ ভরি স্বর্নালংকার , ৪ ভরি রুপার অলংকার, কাসার প্লেট তিনটি, কাসার বাটি চারটি, কাসার গ্লাস ৪টি ও পাঁচটি মোবাইল ফোনসহ আনুমানিক দুই লক্ষ বিরানব্বই হাজার টাকার মালামাল লুট করে চলে যায়।
ঘটনা শোনার পর পরই পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস), সহকারি পুলিশ সুপার ডোমার সার্কেল, অফিসার ইনচার্জ, ডোমার থানা, অফিসার ইনচার্জ, ডিবি, নীলফামারীসহ পুলিশের একাধিক টিম তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ ঘটনায় পহেলা মে অজ্ঞাতনামা ১২ থেকে ১৪ জন আসামীর বিরুদ্ধে ডাকাতি মামলা রুজু করে ডোমার থানায়। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাসুদ করিমকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর বলেন, তদন্ত কাজে সহায়তা করার জন্য ৫ সদস্যের একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়। এ মামলাটিকে চাঞ্চল্যকর হিসেবে গ্রহণ করে আমি নিজে মামলাটির তদারকির দায়িত্ব গ্রহণ করি। টেকনোলজিক্যাল সহায়তায় সবার সহযোগিতায় ঘটনার পর থেকে একটানা অভিযান পরিচালনা করে গত রোববার(৭ মে) নীলফামারীর সিংদই জেলেপাড়া হতে ডাকাতির ঘটনার সহিত জড়িত আন্তঃজেলা ডাকাত দলের কুখ্যাত সদস্য শ্রী অনিল চন্দ্র দাস (২৯) করা হয়। এসময় তার নিকট হতে লুট করা দশ হাজার টাকা, বাটন মোবাইল ফোন একটি, তার নামে রেজিস্ট্রেশনকৃত মোবাইল সিম একটি (যা লুট করা অপর একটি মোবাইল ফোনে ব্যবহৃত) উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে আসামী শ্রী অনিল চন্দ্র দাস তিন দিনের পুলিশ রিমান্ডে রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তার নিকট থেকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পেয়েছি। যা যাচাই করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, কুখ্যাত ডাকাত শ্রী অনিল চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে নীলফামারী সহ অন্যান্য জেলায় আরো চারটি মামলা বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। অনিল চন্দ্র দাসের তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় ডোমারের ছোট রাউতা এলাকার রঙ্গিয়া দাস (৫০) গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোর্পদ্দ করা হয়। আসামী রঙ্গিয়া দাস নিজে ডাকাতির ঘটনার সহিত জড়িত থাকার স্বপক্ষে ও ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী বিজ্ঞ আদালতে প্রদান করেন। বর্তমানে সে জেল হাজতে রয়েছে। কুখ্যাত ডাকাত রঙ্গিয়া দাসের বিরুদ্ধে নীলফামারী জেলায় আরো একটি মামলা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়াও সোমবার(৮ মে) নীলফামারীর কালীতলা বাস টার্মিনাল এলাকা হতে ডাকাতির ঘটনার সহিত জড়িত ডাকাত দলের অন্যতম সদস্য কুখ্যাত ডাকাত নজু মামুদ ওরেফে নজরুল (২৭) গ্রেফ্তার করা হয়। তার কাছে কাসার প্লেট একটি, কাসার বাটি দুইটি, কাসার গ্লাস একটি উদ্ধার করা হয়। তার কাছেও আমরা গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পেয়েছি। যা যাচাই-বাছাই করছি। আজকে তাকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিজ্ঞ আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হবে। লুটের অবশিষ্ট মালামাল উদ্ধার ও আসামী গ্রেফতারের নিমিত্তে অভিযান অব্যাহত আছে।
পুলিশ সুপার বলেন, এ ডাকাত দলটি নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এই চার জেলার আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। এদের অধিকাংশই জেলে সম্প্রদায়ের বিপদগামী সদস্য। এই অধিকাংশ জেলে সম্প্রদায়ের বিপদগামী সদস্য মিলে একটি কুখ্যাত ডাকাত দল গঠন করে চক্রটি বিভিন্ন জেলায় ডাকাতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তারা বিভিন্ন ডাকাতি ও চুরি কার্যক্রমের সাথে জড়িত। এই ঘটনার সাথে জড়িত সকলের বিস্তারিত তথ্য আমরা পেয়েছি এবং এদেরকে গ্রেফতার সহ জড়িতদের গ্রেফতার করতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর সংশ্লিষ্ট শাখা আমাদের বিশেষভাবে সহযোগিতা করছেন।